বার্ষিক পরীক্ষা নিলেন ম্যাজিস্ট্রেট উল্লাপাড়ায় মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে অভিযুক্ত উল্লাপাড়ার বিনায়েকপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপারের অনুপুস্থিতিতে আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার রিমা প্রতিষ্ঠানের আলমারির তালা ভেঙে প্রশ্নপত্র বের করে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন।
জানা যায়, অভিযুক্ত সুপার আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা মেলায় বিনা অনুমতিতে ৩দিন ধরে তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন। গত ২০ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর পর তার অফিস কক্ষের প্রশ্নপত্র সংরক্ষণের আলমারিতে তালা দিয়ে কাউকে কিছু না বলে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। এরপরে তিনি আর মাদ্রাসায় আসেননি।
এতে গতকাল রোববারের সকল পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি মাদ্রাসার শিক্ষকগণ উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বিশ্বাস জানান, মাদ্রাসায় এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে ২০২৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মোমেনা খাতুনকে প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সময় সুপার আব্দুস সামাদ ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
দাবি না মেটানোয় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে সুপার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে আসছিলেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে বিষয়টি নিয়ে মোমেনা খাতুন উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। অভিযোগ করায় সুপার মোমেনা খাতুনকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন।
পরে নির্বাহী অফিসার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি (আব্দুল কাদের বিশ্বাস) প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে মোমেনা খাতুনের অভিযোগ এবং আরও বেশকিছু অনিয়মের সত্যতা পান। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে জানান। এরপর শিক্ষা বোর্ড থেকে পূর্বের পরিচালনা কমিটি কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করেন।
এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দেয়ার পর সুপার আব্দুস সামাদ গত ২০ নভেম্বর তার কক্ষের প্রশ্নপত্রের আলমারিতে তালা দিয়ে ছুটি না নিয়েই প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। এদিকে, গতকাল রোববার প্রশ্নপত্র বের করতে না পারায় শিক্ষকগণ মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তিনি এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার রিমা মাদ্রাসায় গিয়ে উপস্থিত শিক্ষক ও স্থানীয় সুধিজনদের ডেকে আলমারির তালা ভেঙে প্রশ্নপত্র বের করেন এবং পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে মাদ্রাসার সহকারী সুপার আলমগীর কবিরকে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কাদের বিশ্বাস আরও জানান, ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন মাদ্রাসা সুপারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার। এছাড়া স্কুলের নাইট গার্ড ও আরও কয়েকজন শিক্ষক সুপারের স্বজন হওয়ায় সামাদ নিজের খেয়াল খুশিমতো মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন।
উল্লাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার রিমা জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে বিনায়েকপুর মাদ্রাসায় গিয়ে অফিস কক্ষে রক্ষিত বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের আলমারির তালা ভেঙে মাদ্রাসায় বন্ধ থাকা বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করেন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদ্রাসার সভাপতি আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, দ্রুত পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে বিধি মোতাবেক উক্ত মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
এ ব্যাপারে বিনায়েকপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সামাদকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।