বদলে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জে যমুনার চরের অর্থনীতি
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে যমুনা চরে প্রকৃতিকে জয় করে বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রামে সমানতালে লড়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার নারী পুরুষ। বর্তমানে ঘরবন্দী, নির্যাতিতা, স্বামী পরিত্যাক্তা বা বিধবা নারীদের কোমল হাতে কাস্তে, কোদাল সমানতালে চলছে চরের উর্বর পলিসমৃদ্ধ মাটির বুকে। নানামুখী কাজের মাধ্যমে পরিবারে সম্মান বেড়েছে তাদের। আর নারীদের এমন ঘুরে দাঁড়ানোয় বদলে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিও।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া চর ও কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার চরে বালির মাঝে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও জমি তৈরি করে বাদাম লাগাচ্ছেন। পাশেই আরেক জমিতে গিয়ে দেখা মেলে রেহাইশুড়িবেড় চরের রেহানা মজিদ দম্পতির। জমিতে ভুট্টা লাগাচ্ছেন তারা। তাদের সাথে আরও কয়েকজন নারী শ্রমিকও কাজ করছেন।
এসময় রেহানা জানান, ও (স্বামী) একা কাজ করে শেষ করতে পারে না। বাড়তি টাকাও নেই যে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাবো। বাধ্য হয়ে কয়েক বছর ধরে দুইজন মিলে জমিতে কাজ করি। এরইমধ্যে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন তারা। তাদের জমিতেই দিনমজুরির কাজ করছেন ময়না খাতুন(৩২) নামের এক মহিলা। তিনি জানান, মেয়ে কলেজে পড়ে, অনেক খরচ। এক ছেলে স্কুলে যায়। ওদের রিক্সাচালক বাবা একা কাজ করে যা পায় তাতে সংসার চলা কঠিন। তাই তার প্রতিবেশী রেহানাদের জমিতে কাজ করছেন। এতে দিনে তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা পান তিনি।
খাসরাজবাড়ি চরের হালিমা জানান, মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তার চেয়ে পনেরো বছরের বড় বরের সাথে বিয়েতে বাধ্য করে পরিবারের লোকজন। বিয়ের এক বছরেই কোল জুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। তার বয়স বছর না পেরোতেই আরেকটি বিয়ে করে ঢাকায় পাড়ি জমায় তার স্বামী। একদিন আসে তালাকের কাগজ। সেই থেকে গত দশ বছর তিনি নিজের মেয়েকে নিয়ে বাবা মায়ের সংসারে থাকেন। প্রথমদিকে পরিবারের কাছের অবহেলিত ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, একদিন বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমিতে নেপিয়ার জাতীয় ঘাসের চাষ করেন। পলিসমৃদ্ধ মাটিতে সে ঘাস বড় হয় দ্রুত। একদিন পাশের বাড়ির এক চাচা পাঁচশ’ টাকায় সেই ঘাষ কিনে নেন। যা পাল্টে দেয় হালিমার জীবন। ধীরে ধীরে তিনি আরও জমি বন্ধক নিয়ে ঘাসের চাষ শুরু করেন। গত সাত বছরে ঘাস বেঁচেই এখন স্বাবলম্বী তিনি। ঘাস চাষের পাশাপাশি নিজের বাড়িতে মুরগির খামার করেছেন। সেখানে দুইজন নারী শ্রমিক কাজ করেন। মেয়েকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। বর্তমানে পরিবারেও তার বেশ কদর বেড়েছে।
হালিমা জানান, এরইমধ্যে কাজিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে ঘাস এবং হাঁস-মুরগি পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন তিনি নানা সময়ে অফিস থেকে পরামর্শ নেন। নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হালিমা এখন অনেকের রোল মডেল।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/147303