করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও কলেজে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত

করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও কলেজে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্টার : অন্যদিনের চেয়ে আজকের দিনটা একটু ভিন্ন রকম। সকাল থেকেই মনের মধ্যে আনন্দ কাজ করছে। আজ শিক্ষকদের নেই কোন শাসন, নেই পড়ালেখার চাপ। শুধু আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া আর হৈ-হুল্লোর। তাই একটু সাজুগুজু করেও স্কুলে এসেছি। কারণ আজ আমাদের ক্লাসপার্টি। 
 
বগুড়া করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও কলেজের  ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া এভাবেই তুলে ধরেছে ক্লাসপার্টি নিয়ে তার অনুভূতির কথা। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২৫ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ফারিয়া জানায়, এর আগে সে ঢাকার একটি স্কুলে পড়ালেখা করতো, সেই স্কুলেও ক্লাসপার্টি হতো। কিন্তু এত আড়ম্বর আয়োজন থাকতো না। এই প্রতিষ্ঠানে ক্লাসপার্টি উপলক্ষ্যে সকল শিক্ষার্থীরই অংশগ্রহণ রয়েছে,যা খুব আনন্দের।
 
বগুড়া করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে বৃহস্পতিবার বর্ণিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত ক্লাস পার্টিতে শুধু ফারিয়াই নয়, প্রতিটি শিক্ষার্থীর মুখেই ছিলো খুশির ঝিলিক।  সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুরো ক্যাম্পাস উৎসবমুখর পরিবেশে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে শ্রেণিকক্ষ সাজায়, কেক কাটে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়।
 
প্রতিষ্ঠানটি দুটি শিফটে পরিচালিত হয়। সকালে নার্সারি থেকে ৫ম শ্রেণি এবং বিকেলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত। উভয় শিফটের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষে পৃথকভাবে ক্লাস পার্টি উদযাপন করে। সকালের প্রথম দিক থেকেই শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে শ্রেণিকক্ষ সাজানো শুরু করে। কোনো ক্লাসে দেয়ালজুড়ে রঙিন কাগজের মালা, কোথাও আবার বেলুনের তোরণ। অনেক ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলেমিশে নিজেদের হাতে তৈরি পোস্টার টানিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত খাবারের মধ্যে ছিল কেক, নানা ধরনের স্ন্যাকস, ফল, চকলেট, মিষ্টান্ন, জুসসহ নানা ধরনের আইটেম। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সকালে শিফটের শিক্ষার্থীরা ক্লাসপার্টিতে অংশ নেয়। ছোট শিক্ষার্থীরা উৎসাহ নিয়ে ক্লাস সাজাতে এবং খাবারের আয়োজন করতে অংশ নেয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস পার্টি শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে।
 
ডে শিফটের ক্লাস পার্টির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ও অধ্যক্ষ অসিত কুমার সরকারসহ অন্যান্য অতিথিরা ষষ্ঠ শ্রেণির শাপলা শাখায় ঢুকতেই শিক্ষার্থীরা পুষ্প বর্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাগত জানায়। অতিথি হিসেবে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা বেগম, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের কার্যনির্বাহী সদস্য তাসলিমা হক, চৌধুরী খালেকুজ্জামান বাবু, শ্রেণি শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। অতিথিরা প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন করেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেক কাটেন এবং তাদের উৎসাহিত করেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের সার্বিক অগ্রগতি, শৃঙ্খলা ও সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
 
দিনব্যাপী আয়োজনে শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা আবৃত্তি, গল্প বলা, নাচসহ বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থাপন করে। তাদের অংশগ্রহণে ক্লাসরুমগুলো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলে, আমরা সারাবছর পড়াশোনার মধ্যে থাকি। এমন একটি দিন আমাদের খুব আনন্দ দেয়। আমরা নিজেরা ক্লাস সাজিয়েছি, কেক কেটেছি, গানও করেছি। সবাই মিলে দারুণ সময় কাটিয়েছি। শুধু পড়ালেখাই নয়, আমাদের মানসিক আনন্দও খুব প্রয়োজন। আজকের পার্টিতে আমরা একসঙ্গে সময় কাটিয়েছি, নিজেদের প্রতিভা দেখিয়েছি। এতে সহপাঠীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছি।
 
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অসিত কুমার সরকার বলেন, শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, এই ধরনের উৎসব শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, আত্মবিশ্বাস এবং পারস্পরিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। আমরা শিক্ষার্থীদের সবসময় আনন্দমুখর পরিবেশ দিতে চাই। এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ, আনন্দমুখর ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করি। তাদের প্রতিভা বিকাশে কো-কারিকুলার কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি। আজ শিশুদের হাসিমুখ, তাদের নিজ হাতে সাজানো ক্লাসরুম ও পরিবেশনা দেখে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। 
 
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, শিক্ষার্থীরাই একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দ-উৎসব, সাংস্কৃতিক চর্চা ও মিলনমেলা শিশুদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থী বইয়ের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা, দলগত কাজ এবং দায়িত্ববোধে এগিয়ে যাক। আজকের এই ক্লাস পার্টি তাদের সেই পথে ছোট্ট কিন্তু অর্থবহ একটি পদক্ষেপ।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/147268