হিমেল বাতাসের সাথে কাজিপুরের কম্বল পল্লীতে বেড়েছে ব্যস্ততা

হিমেল বাতাসের সাথে কাজিপুরের কম্বল পল্লীতে বেড়েছে ব্যস্ততা

আবদুল জলিল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) : উত্তরের হিমেল বাতাস বইতে শুরু করার সাথে সাথে ব্যস্ততা বেড়েছে সিরাজগঞ্চের কাজিপুর উপজেলার কম্বল পল্লীতে। উপজেলার কম্বল পল্লীর রাজধানীখ্যাত শিমুলদাইড় বাজারসহ আশপাশের ছালাভরা, কুনকুনিয়া, বর্শিভাঙ্গা, সাতকয়া, বিলচতল, ঢেকুরিয়া, পলাশপুর, বেলতৈল, শ্যামপুর, কবিহার, চালিতাডাঙ্গাসহ প্রায় তেত্রিশটি গ্রামের ৩৬ থেকে ৪০ হাজার নারী-পুরুষ এখন দিনরাত কম্বল তৈরি করছেন।

সরেজমিনে গত সোমবার বিকেলে শিমুলদাইড় বাজারে গিয়ে দেখে যায়, প্রতিটি গুদাম ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক। শ্রমিকেরা সেই ট্রাকে কম্বল লোড করছেন। কম্বল পল্লীর একমাত্র কারখানায় দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকেরা। বাহারি সুতোয় বোনা হচ্ছে নানা রঙ ও মাপের কম্বল।

পাশেই বিশাল ঘরে সেলাই মেশিনে উৎপাদিত কম্বলের মুড়ি সেলাই করছেন কারিগরেরা। পরে নিজস্ব দোকানের সিল লাগিয়ে তা বিশেষ ব্যাগে গুদাম ঘরে রাখা হচ্ছে। এরপর চাহিদামতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারদের অর্ডারকৃত কম্বল ট্রাকে ভরেন শ্রমিকেরা। সবমিলে শিমুলদাইড় বাজারে প্রতিদিন তিনশ’ থেকে চারশ’ শ্রমিক লোড আনলোডের কাজ করেন।

দামের ক্ষেত্রে আছে রকমফের। এখানে মাত্র আশি টাকা থেকে শুরু করে পৌণে ছয় হাজার টাকায় কম্বল বিক্রি করা হয়। শিশুদের পায়জামা ১২ টাকা থেকে দুইশ’ টাকা এবং জামা ৩০ টাকা থেকে চারশ’ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

মেসার্স সহীহ ট্রেডার্সের মালিক শরিফ সোহের জানান, বাজারে আমাদের কম্বলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামে সস্তা, বাহারি ডিজাইন, রাস্তা সংলগ্ন বাজার থেকে গাড়ি লোড করার সুবিধা, কোন চাঁদাবাজির খপ্পড়ে ব্যবসায়ীদের পড়তে হয়না, সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায় এসব সুবিধার কারণে এখানকার কম্বলের চাহিদা দেশজুড়ে।

হাজী চান মিয়া জানান, তিনযুগ ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে শিমুলদাইড় বাজার কেন্দ্রিক এই ব্যবসা জমে উঠেছে। এই অঞ্চলের শ্রমজীবি মানুষদের অনেকেই এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে কারখানা দিচ্ছেন।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কম্বল শিল্প এখন এই উপজেলার ব্র্যান্ডিংয়ের মতো হয়ে গেছে। ঝামেলামুক্ত পরিবেশে শ্রমিকেরা এখানে কাজ করছেন দিনরাত। এই শিল্পের প্রসারে উপজেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে আছে। কম্বল শিল্পের কারণে এখানে যারা কাজ করছে তাদের যাপিত জীবনে এসেছে পরিবর্তন। প্রতিটি পরিবারেরই এখন একটি কমন গল্প রয়েছে। সেই গল্পের শিরোনাম কেবলই সমৃদ্ধির, কেবলই উন্নতির।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/147130