বগুড়ার কামারগাড়ী ও সেউজগাড়ী মোড়ে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

বগুড়ার কামারগাড়ী ও সেউজগাড়ী মোড়ে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরের স্টেশন রোডে কামারগাড়ী রেল ঘুমটি ও সেউজগাড়ী আমতলা মোড়েও এখন তীব্র যানজট হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সকাল, দুপুর ও বিকেলে এ দুটি স্থানে যানজট পড়ে নাকাল হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এদুটি স্থানে যানজট বাড়লেও ট্রাফিক পুলিশের তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেই। নেই কোন ট্রাফিক পুলিশের স্থায়ী কার্যক্রম।

তবে  মাঝে মধ্যে কামারগাড়ী মোড়ে অনিয়মিত ভাবে একজন ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলেও সেউজগাড়ী আমতলা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের কোন কার্যক্রম নেই। কামারগাড়ী রেল ঘুমটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকলে যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকে। আবার ট্রাফিক পুলিশ চলে গেলে যানজট বাড়ে। তাই এলাকাবাসির দাবি, ওই দুটি এলাকায় ট্রাফিক পোস্ট স্থাপন করা হোক।

কামারগাড়ী এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রায় প্রতিদিনই কামারগাড়ী মোড়ে একটি নিদিষ্ট সময়ে যানজট লেগেই থাকে। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যাওয়া ও ফেরার সময় সেখানে যানজটে আটকা পড়েন। সেইসাথে পরীক্ষার শুরু আগেও সেখানে যানজট হয়। যানজটে পড়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ও করতোয়া মাল্টি মিডিয়া স্কুল ও কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ নাকাল হন।

শুধু কামারগাড়ী মোড়েই নয়, সেউজগাড়ী মোড়েও তীব্র যানজট হয়। যানজটে পড়ে সময় নষ্ট হয় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের। ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগে এক ঘন্টা পর্যন্ত। সেউজগাড়ী এলাকার বাসিন্দা বৃহত্তর সেউজগাড়ী ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির  সভাপতি মোঃ বজলুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল জলিল বলেন, কামারগাড়ী মোড়ে আর সেউজগাড়ী আমতলা মোড়ে প্রায় প্রতিদিন বেলা ১১ থেকে বেলা ১ টার মধ্যে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

এ সময় যানজটে পড়ে স্টেশন রোড ছেড়ে পাড়া মহল্লার গলি রাস্তায় ঢুকে পড়ে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। এতে গলির রাস্তাতেও যানজটে পড়ে আটকা থাকতে হয়। এতে এলাকাবাসির চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এবিষয়ে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী ছাত্র নেতা রাফিউল আল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই দুটি এলাকায় যানজটে পড়ে নাকাল হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এতে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।  ভোগান্তি বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু যানজট নিয়ন্ত্রনে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।

তিনি বলেন, কামারগাড়ী ও সেউজগাড়ী মোড়ের পাশাপাশি স্টেশন রোড়ে ১০ তলার সামনে কলেজের গেটের সামনেও মাঝে মধ্যে যানজট হয়। সেখানে যানজট নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, কামারগাড়ী মোড়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে কিছু সময়ের জন্য একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে দেখা গেলেও তিনি নিয়মিত প্রতিদিন আসেন না। যে কারনে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তিনি, যানজট নিয়মিত ট্রাফিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করাসহ ট্রাফিক পোস্ট স্থাপনেরও দাবি জানান।

এ ব্যাপারে বগুড়া করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অসিত কুমার সরকার বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রনের জন্য কামারগাড়ী মোড়ে ও সেউজগাড়ী মোড়ে ট্রাফিক পোস্ট থাকা প্রয়োজন। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলে যানজট কমে আসবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যপারে স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ মো. এরশাদুল বারী বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ওই দুটি এলাকায় যানজট হচ্ছে এতে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ও করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন সেখানে যানজট নিয়ন্ত্রনে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তিনি যানজট নিয়ন্ত্রনে সেখানে ট্রাফিক পোস্ট স্থাপনের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, কামারগাড়ী মোড়ে যানজট বাড়ার আরেক কারন রেলওয়ের গেইট বেরিয়ার। নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন চলাচলের সময় এই গেইট বেরিয়ার রাখা হয়। আর তখনই রাস্তার দু’পাশে যানজট লেগে যায়।

বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো: সাজেদুর রহমান সাজু জানান, রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন আসার ২০ মিনিট আগে গেইট বেরিয়ার বন্ধ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু যানজট হয় ভেবে গেইটম্যান ২০ মিনিটের স্থলে ৫-১০ মিনিট আগে গেইট বেরিয়ার বন্ধ রাখেন জনস্বার্থে। নিয়ম ভেঙ্গে এর চেয়ে বেশি কিছু করা যাবেনা। রেল তার আইন অনুযায়ী চলবে এটাই স্বাভাবিক।

এ ব্যাপারে সদর ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ (টিআই) মে. সালেকুজ্জামান খাঁন বলেন, স্টেশন রোডে কামারগাড়ী মোড়ে এখন নিয়মিত একজন ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছেন। এতে সেখানে যানজট কমে গেছে। তবে সেউজগাড়ী মোড়ে নিয়মিতভাবে ট্রাফিক পুলিশ দেয়া হয়নি। সেউজগাড়ী মোড়েও অচিরেই স্থায়ীভাবে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে বলে তিনি জানান।

সেইসথে কামারগাড়ী মোড়ে ও সেউজগাড়ী মোড়ে ট্রাফিক পোস্টের জন্য যে দাবি তোলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বগুড়া শহরের ব্যাটারি চালিত রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা,মোটর সাইকেল, কার, মাইক্রোবাসসহ অন্তত লক্ষাধিক যানবাহন চলাচল করে। এত বিপুল সংখ্যক যানবাহন নিয়ন্ত্রণে মাত্র ৭৭ জন ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে।

এর মধ্যে রয়েছে টি আই ৭ জন, সার্জেন্ট ৮ জন, টিএসআই ৩জন, এটিএসআই ১৩ জন ও কনস্টেবল ৪৬ জন। তাই জনবল কম থাকায় সব যানজট প্রবণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব হয়না। এই কম সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে দিয়েই যানজট নিয়ন্ত্রনে কাজ করতে হয়।

উল্লেখ্য, শুধু কামারগাড়ী মোড় ও সেউজগাড়ী আমতলা মোড়ই নয়, সারা শহরেই যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে শহরের সাতমাথা, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, চাঁদনী বাজার, ফতেহ আলী মোড়, বড়গোলা, চেলোপাড়া, গোহাইল রোড়, শেরপুর রোড, ইয়াকুবিয়া স্কুল এন্ড কলেজ মোড়, চকযাদু রোড, বাদুড়তলা, টিনপট্টি,দত্তবাড়ি মোড়, পুরান বগুড়া তিনমাথা মোড় ও চারমাথা, জলেশ্বররীতলা কালিবাড়ি মোড়, সুত্রাপুর মফিজ পাগলার মোড়সহ বিভিন্নস্থানে প্রতিদিনই ভয়াবহ যানজট হয়। যানজটে পড়ে নাকাল হচ্ছে মানুষ।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/146995