বগুড়ার ধুনটে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইছ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাবার কোলে চড়ে ১৮ বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইছ খাতুন ওরফে হাসি এবার অনার্স চুড়ান্ত পর্বের পরিক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার ফলাফল ৩ দশমিক ০২ গ্রেড। এমন ফলাফলে আনন্দে উচ্ছ্বাসিত নাইছ। এই কৃতিত্বে খুশি হয়েছেন তার মা-বাবা ও ভাইসহ স্বজনরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুটো পা আছে, তবে সেগুলোয় শক্তি নাই। ডান হাতেও নেই শক্তি। সম্বল তার বাঁ হাত। সব সময় বাবার কোলে চড়েই ওকে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে হয়েছে। এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন।
ধুনট উপজেলার বহালগাছা গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম নজরুল ইসলাম ও মায়ের নাম আকতার জাহান। দরিদ্র এই দম্পতির ঘরেই ২০০১ সালে জন্ম নেয় নাইছ খাতুন ওরফে হাসি। নাইছ ৬ বছর বয়সে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ৫ম শ্রেণির লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
ওই বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মানবিক শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় ৩.৫৫ পয়েন্ট পেয়ে কৃতকার্য হন। এরপর ২০১৯ সালে বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ২.৭৫ পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেছেন। এরপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে নাইছ বাড়ি থেকে বাবার কোলে চড়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেছেন।
নাইছের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে দূর থেকে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। দুটো পা, একটি হাত নিশ্চল। তাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। শুধু বসা অবস্থায় বাঁ হাতটি দিয়ে কলম ধরে লিখতে পারে সে। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাইছ ছোট। জন্ম থেকেই নাইছের ছিল হাসিভরা মুখ। তাই তার মা-বাবা আদর করে নাম রাখেন হাসি। শরীরের এই প্রতিবন্ধিতাকে হাসিমুখেই জয় করেছেন মেয়েটি। নাইছের চিকিৎসার জন্য তার বাবা অনেক ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে নিয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি।
নাইছ খাতুন বলে, শরীরে শক্তি নেই, তাই কী হবে? মনোবল আর এক হাতের শক্তি নিয়েই জীবন শুরু করেছি। আমি কারও মাথায় বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। বাবার কোলে চড়ে একসময় রাস্তায় বের হলে মানুষ আড় চোখে তাকিয়ে থাকতো। লেখাপড়া করার কারণে মানুষ এখন ভালোবাসে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সমাজের সবার ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করতে চাই।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/146685