ব্রেকআপের পর জেন-জিদের মধ্যে বাড়ছে ছুটি চাওয়ার প্রবণতা

ব্রেকআপের পর জেন-জিদের মধ্যে বাড়ছে ছুটি চাওয়ার প্রবণতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক : সম্পর্ক ভাঙার পর মানসিক চাপ কাটাতে ছুটি চাওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে জেন-জি প্রজন্মের (১৯৯৭–২০১২ সালে জন্ম নেওয়া তরুণ কর্মী) মধ্যে। সম্প্রতি ভারতের গুরগাঁওভিত্তিক জীবনসঙ্গী খোঁজার অ্যাপ ‘নট ডেটিং’–এর এক কর্মীর পাঠানো একটি ই-মেইল এই আলোচনাকে নতুন করে উসকে দিয়েছে।

ই-মেইলে ওই কর্মী লেখেন, ‘সম্প্রতি আমার ব্রেকআপ হয়েছে। কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না। সামান্য বিরতি দরকার। আজ বাসা থেকে কাজ করব।’

অ্যাপটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সেই ই-মেইলটি মুহূর্তের মধ্যেই মঞ্জুর করেন এবং অনলাইনে শেয়ার করে লেখেন, “এটাই আমার দেখা সবচেয়ে সৎ ছুটির আবেদন।”

এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় বিষয়টি। কেউ একে সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের উদাহরণ বলেছেন, আবার কেউ পেশাগত সীমারেখা ভাঙা হিসেবে সমালোচনা করেছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনাই কর্মক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় জেন-জিদের কর্মসংস্কৃতি ও মানসিকতার রূপান্তর।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, জেন-জি প্রজন্ম মনে করে মানবিক হওয়া কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি একটি পেশাগত শক্তি। কাজের দক্ষতার পাশাপাশি তারা মানসিক স্থিতি, আত্মিক স্বচ্ছতা ও সহমর্মিতাকে সমান গুরুত্ব দেয়।

 
যুক্তরাজ্যের লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল গ্রুপ প্রোটেকশন–এর এক জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে প্রতি তিনজন জেন-জি কর্মীর মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন—যা অন্য প্রজন্মের তুলনায় বেশি।

দীর্ঘদিন ধরে কর্মক্ষেত্রে ‘পেশাদারিত্ব’ মানে ছিল ব্যক্তিগত আবেগ আড়াল করা। তবে কোভিড–পরবর্তী সময়ে হাইব্রিড ওয়ার্ক মডেল, অনলাইন সংযোগ ও বার্নআউটের কারণে কাজ ও ব্যক্তিজীবনের সীমারেখা অনেকটাই মিশে গেছে।

২০২৪ সালের ফিউচার ফোরাম–এর এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪২ শতাংশ কর্মী বার্নআউটে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন বার্নআউটকে একটি ‘পেশাগত মানসিক অবস্থা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ব্রেকআপ-পরবর্তী ছুটি: বিলাসিতা নয়, বাস্তব প্রয়োজন

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সম্পর্ক ভাঙার পর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব অনেকটা শোকের মতোই। এতে ঘুমের ব্যাঘাত, মনোযোগহীনতা, উদ্যম কমে যাওয়া ইত্যাদি কর্মক্ষমতায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় কয়েক দিনের বিশ্রাম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণের অংশ হতে পারে।

তবে সব প্রতিষ্ঠান এই ধরনের ছুটি দিতে আগ্রহী নয়। অনেক এইচআর বিশেষজ্ঞের মতে, ব্যক্তিগত কারণকে বৈধ ছুটির অজুহাত হিসেবে স্বীকৃতি দিলে নীতিগত জটিলতা ও অপব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

অন্যদিকে, আধুনিক কর্মসংস্কৃতির সমর্থকেরা বলছেন সহানুভূতি ও পেশাদারিত্ব একে অপরের পরিপূরক।

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বাড়ছে

ডেলয়েট এর ২০২৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, ৪০ শতাংশ জেন-জি এবং ৩৫ শতাংশ মিলেনিয়াল কর্মী নিয়মিত মানসিক চাপ অনুভব করেন।
তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পারিবারিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা।

বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এখন কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে যেমন ‘ব্যক্তিগত ছুটি’র সুযোগ, গোপন পরামর্শ সেবা, কিংবা ধাপে ধাপে কাজে ফেরার ব্যবস্থা।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব উদ্যোগ কর্মীর মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা দুটিই রক্ষা করে। এটি এমন এক ভারসাম্য, যেখানে মানবতা ও পেশাদারিত্ব পাশাপাশি চলে।

ব্রেকআপের পর কর্মজীবনে টিকে থাকার কিছু পরামর্শ

.আবেগের বিষয়টি মেনে নিন—মনোযোগ কমে যাওয়া স্বাভাবিক।

.বিশ্রাম নিন, অতিরিক্ত কাজ করে কষ্ট ঢাকার চেষ্টা নয়।

.সহকর্মী বা কাউন্সেলরের সহায়তা নিন।

.প্রয়োজনে বাসা থেকে কাজ করুন বা স্বল্পমেয়াদি ছুটি নিন।

.ঘুম, ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।

.সৃজনশীলভাবে আবেগ প্রকাশ করুন (লেখা, সংগীত, শিল্পচর্চা)।

.পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখুন।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, জেন-জি প্রজন্মের কাছে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্য মানে আবেগ লুকানো নয়, বরং আবেগকে শক্তিতে পরিণত করা। তাই ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়ার বিষয়টি কোনো দুর্বলতা নয় বরং এটি স্বচ্ছতা, সততা ও আত্মসচেতনতার প্রতিফলন।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/146657