সিলভার, তামা, নাকি পিতল : কোন ধাতুর গ্লাসে পানি পান করা স্বাস্থ্যসম্মত?

সিলভার, তামা, নাকি পিতল : কোন ধাতুর গ্লাসে পানি পান করা স্বাস্থ্যসম্মত?

ভারতের ঘরে ঘরে শতাব্দী ধরে প্রচলিত পানির জন্য ধাতব পাত্রের ব্যবহার। আজও অনেক ব্যক্তি এই রীতি অনুসরণ করছেন, যার মধ্যে রয়েছেন কঙ্গনা রানাউত ও তানিয়া মিত্তল। আয়ুর্বেদ মতে, ধাতব পাত্র কেবল পানি ধারণ করে না, বরং তাকে “জীবন্ত” করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এখন প্রমাণ করছে যে, কিছু ধাতু পানির পিএইচ পরিবর্তন করতে, ক্ষুদ্র খনিজ উপাদান যোগ করতে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে কোন ধাতুর গ্লাসটি আপনার টেবিলে থাকা উচিত: তামা, সিলভার, না পিতল?

তামার গ্লাস

তামাকে দীর্ঘদিন ধরেই বিশুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়ে এসেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক ঘণ্টা তামার গ্লাসে পানি রাখলে তার সঙ্গে তামার আয়ন মিশে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘ওলিগোডাইনামিক এফেক্ট’, যা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নাশ করতে সাহায্য করে।

এই পানি পান করলে হজম প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয়, থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং লিভারের ডিটক্সেশন হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, তামা মেলানিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং অকাল চুলের সাদা হওয়া কমানো যায়। তবে অত্যধিক ব্যবহারে মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। সাধারণভাবে, প্রতিদিন সকালে এক বা দুইবার তামার গ্লাসে পানি পান করা নিরাপদ ও উপকারী।

সিলভার গ্লাস

শীতল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য সিলভার শতাব্দী ধরে পানি ও ওষুধ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। NIH-এর এক গবেষণা দেখিয়েছে যে, সিলভার আয়ন ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে পারে এবং ইমিউনিটি শক্তিশালী করে।

সিলভার গ্লাসে রাখা পানি ঠান্ডা ও সতেজ বোধ করায়, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায়। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। অনেক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে শিশুরা বা অসুস্থদের জন্য সিলভার গ্লাস ব্যবহার করা হত, কারণ এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। যদিও সিলভার দামি, মাঝে মাঝে স্বাস্থ্যবর্ধক অভ্যাস হিসেবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

পিতলের গ্লাস

তামা ও জিঙ্কের মিশ্রণ পিতল স্বাস্থ্য সুবিধায় অনন্য। জিঙ্ক কোষ পুনরুদ্ধারে, বিপাক শক্তি বাড়াতে এবং স্বাস্থ্যকর চুল ও ত্বক বজায় রাখতে সাহায্য করে। পিতলের মধ্যে থাকা তামা ও জিঙ্ক পানিতে ক্ষুদ্র কিন্তু কার্যকর খনিজ যোগ করে।

পিতলের গ্লাস বিশেষ করে ধীর বিপাক বা ফ্যাকাশে ত্বকযুক্ত মানুষের জন্য ভালো। তবে সঠিকভাবে পরিষ্কার করা জরুরি। অ্যাসিডিক পানীয় বা লেবুর পানি এতে রাখা ঠিক নয়, কারণ অ্যাসিড ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করতে পারে।

মাটির গ্লাস

মাটি থেকে তৈরি গ্লাস ধাতু নয়, কিন্তু তা উল্লেখযোগ্য। এটি স্বাভাবিকভাবে পানি ঠান্ডা রাখে এবং হালকা ক্ষারীয় পিএইচ বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা দেহের অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। মাটি থেকে পানি কিছুটা খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম পায় এবং এর মাটির গন্ধে একটি নস্টালজিক অনুভূতি তৈরি হয়। একমাত্র অসুবিধা হলো এগুলো ভঙ্গুর এবং প্রায়শই পরিবর্তন প্রয়োজন।

স্টিল গ্লাস
স্টেইনলেস স্টীল হয়তো ঐতিহ্যগত আকর্ষণ হারায়, কিন্তু ব্যবহারিকভাবে এটি সেরা। এটি টেকসই, জং-রহিত, অপ্রতিক্রিয়াশীল এবং সব ধরনের পানীয়ের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। তামা বা পিতলের মতো এটি পানির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে না, তাই দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য আদর্শ। স্টীল গ্লাসের রক্ষণাবেক্ষণও সহজ।

কোনটি বেছে নেবেন?
দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য স্টীল সবথেকে নিরাপদ। মাঝে মাঝে স্বাস্থ্যবর্ধক অভ্যাসের জন্য তামা বা পিতল যোগ করা যেতে পারে, যথাযথভাবে পরিষ্কার করলে। আর যদি গরমে সতেজ পানির অভিজ্ঞতা চান, সিলভার বা মাটির গ্লাস চমৎকার সঙ্গী হতে পারে।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/145926