ভবিষ্যতের সরকারের জন্য হাসিনা সরকার ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ রেখে গেছে: শফিকুল আলম

ভবিষ্যতের সরকারের জন্য হাসিনা সরকার ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ রেখে গেছে: শফিকুল আলম

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের রেভিনিউ সবচেয়ে কম। হয়তো আফগানিস্তানের ওপরে আছি আমরা। হয়তো আফগানিস্তানও আমাদের ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশের বেতন কাঠামোও সারা পৃথিবীর মধ্যে অনেক কম। বেতন যে বাড়ানো যাবে, সে অনুযায়ী তো রেভিনিউ আমাদের নেই। ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনার ‘চোরতন্ত্র’ রেখে গেছে।’’

শনিবার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জনতার ইশতেহার’ ও ‘অনলাইন প্রমিজ ট্র্যালকার’ নামক ওয়েবসাইট ও অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। পরামর্শক সংস্থা ‘ট্রেস কনসালটেন্সি’ এর আয়োজন করে।

 

অনুষ্ঠানে শফিকুল আলম বলেন, বিগত সরকারের আমলে অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো হয়েছে। গোপালগঞ্জ থেকে কাশিয়ানী রেল লাইন বানিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ চলে না। অথচ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম উচ্চগতির রেললাইন করা দরকার। এলিভেটের এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে ঢাকা থেকে খুলনায়। যেখানে দিনে ৫০০ থেকে এক হাজার লোক হয়। এটা কি আমাদের ‘গ্রোথ এরিয়া’? এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে যাতে গোপালগঞ্জে যাতে কাজ করা হয়। পাঁচ বিলিয়ন টাকা এতে খরচ হয়েছে। তখন গণমাধ্যমে খবর হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে নাকি অনেক উন্নয়ন হবে। কই, কিছুই তো হয়নি। এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে একটা টানেল করা হয়েছে যাতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী আনোয়ারায় তার বাড়িতে যেতে পারেন। সাড়ে চারশো কোটি টাকা দিয়ে আনোয়ারায় একটা সাত তারকা হোটেল করা হয়েছে, যাতে তিনি সেখানে থাকতে পারেন।

শফিকুল আলম বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন করার জন্য সরকার অঙ্গিকারাবদ্ধ। এখন অনেকে বলে জুলাই সনদ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনুযায়ী তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এটা খুব দ্রুতই হবে। যেন নির্বাচনের সঙ্গে কোনো অনিশ্চয়তা না থাকে।

 

তিনি বলেন, কিছু কিছু ‘থিংক ট্যাংক’ বলছেন, জুলাই সনদ প্রণয়নের আগে কৃষকের সঙ্গে কথা বলা হয়নি, নারীদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়নি। এসব কথা শুনে আমার আশ্চর্য লাগে। এই কথাগুলো তারা কীভাবে বলেন? ঐকমত্য কমিশন যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বললো, সেই দলগুলো কি এসব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না? দলগুলোর কি শ্রমিক উইং, নারী উইং কিংবা পেশাজীবী উইং নেই? এসব থিংক ট্যাংকরা নিজেদের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য এ ধরনের মুখরোচক কথা বলেন। জুলাই সনদে সবকিছুই এসেছে। নয় মাসে যে সবকিছু করে ফেলবো, এমনও তো হয় না। এমনও হতে পারে যে, নির্বাচনের পর আবারও নতুন করে সংলাপ হতে পারে।

নেপালের উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাদের একটা ‘মোনার্কি কনস্টিটিউশন’ করতে নয় বছর লেগে গেছে। সেদেশেও তো অনেকগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে। যাদের জনগণের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সশস্ত্র সংঘাত ও সহিংসতাও হয়েছে। তারা বছরের পর বছর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়েও আলোচনা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, একটি ভালো সরকার ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ। এটা তো একদিনে হবে না। একদিন সংলাপ করে তো এটা সম্ভব হবে না।

প্যানেল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বুলবুল সিদ্দিকী, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক আবদুস সাত্তার দুলাল প্রমুখ। এই সেশনের মডারেটর ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান।

এর আগে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘জনতার ইশতেহার’ ও ‘অনলাইন প্রমিজ ট্র্যা কার’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘পিপল-ওরিয়েন্টেড এন্ড টেকনোলজি-ড্রিভেন ম্যানিফেস্টো’ শীর্ষক ধারনাপত্র উপস্থাপন করেন ট্রেস কনসালটেন্সি সিইও ফুয়াদ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/145851