খুরশীদ আলমকে হাইকোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অপসারণ

খুরশীদ আলমকে হাইকোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অপসারণ

সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য হয়ে পড়ায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাকে পদ থেকে অপসারণ করে বুধবার (০৫ নভেম্বর) আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের তদন্তে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার তার পদের  দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বিধায় রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের পুনর্বহালকৃত অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা-৬ এর বিধান অনুযায়ী ৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে তাকে উক্ত পদ থেকে অপসারণ করেছেন।

২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতির বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তাদের বেঞ্চ প্রদান থেকে বিরত থাকেন। বিচারপতি খুরশীদ আলম ছিলেন ওই তালিকার একজন। তাকে নিয়ে ১২ জনের মধ্যে মোট ৯ জন বিচারপতির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে তদন্ত চলমান রয়েছে।

 

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ১৫ অক্টোবর রাতে ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করতে ফেসবুকে ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। পরের দিন ১৬ অক্টোবর দুপুরে মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট চত্বরে আসেন শিক্ষার্থীরা। তারা হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই বেশ কয়েকজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার পর ১৬ অক্টোবর বিকেলে ছাত্রদের সামনে এসে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রপতি। তাদের পদত্যাগ বা অপসারণ; সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় উনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না।

 

এই ১২ বিচারপতির মধ্যে গত ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের অনুসন্ধান পরিচালনার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তাধীন বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তার স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন গত ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন।

 

এছাড়া, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলন হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। অপর দুই বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস ইতোমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন। এছাড়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন। এর মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতকে গত ১৮ মার্চ ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে গত ২১ মে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ আজ বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ করা হয়।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/145520