ঠাকুরগাঁওয়ে দশ মাসে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা ৫২১, মৃত্যু ৬
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে মোট ৫২১ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনকে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়েছে এবং ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ৫ জনই মারা গেছেন ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিষধর সাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক। অনেকেই বিষধর সাপের দংশনের পর ওঝা বা স্থানীয় ঝাড় ফুঁকে সময় নষ্ট করছেন, ফলে প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৩৩ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে ২০ জনকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়। হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সাদ্দাম হোসেন, মহিলা মেডিসিন ইনচার্জ জয়া বর্মন এবং শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ তাজনেহার জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ৫০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম মজুত আছে, এরই মধ্যে ৩৬০ ভায়াল ব্যবহার করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জন সাপে কাটা রোগীর মধ্যে ২ জন বিষধর সাপে আক্রান্ত হন, ১ জনকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয় এবং ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ১৫ ভায়াল অ্যান্টিভেনম মজুত আছে।
রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন রোগী এলেও কেউ বিষধর সাপে আক্রান্ত হননি। মজুত আছে ১২ ভায়াল অ্যান্টিভেনম। পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন রোগী ভর্তি হলেও বিষধর সাপে আক্রান্ত না হওয়ায় কাউকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়নি। সেখানে ২০ ভায়াল মজুত আছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন সাপে কাটা রোগীর মধ্যে ৬ জন গোখরা সাপের দংশনে আক্রান্ত হন। ১ জনকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে ১১ ভায়াল মজুত আছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিলা আকতার।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সাপে কাটা রোগীদের বেশিরভাগই হাসপাতালে আসতে দেরি করছেন। অনেকে প্রথমে ওঝার কাছে যান, এতে অ্যান্টিভেনম দেওয়ার সঠিক সময় পার হয়ে যায় এবং মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিষধর সাপে দংশনের সাথে সাথে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসাই জীবন রক্ষার মূল উপায়। তিনি আরও জানান, হাসপাতালেই বর্তমানে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত আছে এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/145500