বগুড়ার ডিবি’র ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার আদেশ বাতিল, স্বপদে বহাল
স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক ইনচার্জ (ওসি) মো. ইকবাল বাহার ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হককে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) প্রশাসনিক কারণে সংযুক্তির আদেশ প্রত্যাহার করা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত আদেশ বগুড়া জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছে। বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ৩ নভেম্বর রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান সইকৃত আদেশে তাদের সংযুক্তির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। সেইসাথে তাদেরকে মাতৃ ইউনিট বগুড়া জেলা পুলিশে যোগদানের জন্য ছাড়পত্র দিতে বলা হয়েছে। আদেশে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ অক্টোবর প্রশাসনিক কারণে তাদেরকে আরআরএফ রাজশাহীতে সংযুক্ত করা হয়। অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সংযুক্তির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে এই তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি’র নেতাকর্মীরা ১৬ অক্টোবর বগুড়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে। তারা ডিবি পুলিশের তিন কর্মকর্তার প্রত্যাহারের আদেশ বাতিলের দাবিতে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান সইকৃত এক আদেশে প্রশাসনিক কারণে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইনচার্জ ইকবাল বাহার, পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন, ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ফজলুল হককে প্রত্যাহার করে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআর এফ) রাজশাহীতে সংযুক্ত করা হয়।
জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, গত ১১ অক্টোবর বগুড়ার ডিবি পুলিশ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা থেকে রাজু মুন্সি (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে বগুড়ায় নিয়ে আসে। পরদিন তাকে একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। রাজু মুন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে গত ২৭ জুলাই বগুড়া শহরের আব্দুল হক নামে এক ব্যবসায়ীকে ফোন করেন। ওই ব্যবসায়ীর মাদ্রাসা পড়ুয়া সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার জন্য ব্যাংক হিসাব নম্বর চাওয়া হয়। তিনি (আব্দুল হক) ব্যাংক হিসাব নম্বর দিলে তার মোবাইল ফোনে একটি পিন নম্বার পাঠিয়ে তা সংগ্রহ করে নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব থেকে ২৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৫ টাকা স্থানান্তর করে নেন প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এবিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে ডিবি’র পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন অভিযোগ তদন্ত শুরু করেন। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় দীর্ঘ তদন্ত করে ডিবি পুলিশ রাজু মুন্সিকে শনাক্ত করে।
এরপর বগুড়ার ডিবি পুলিশ রাজু মুন্সিকে গ্রেফতার করার জন্য র্যাবের সহযোগিতা চান। রাজু মুন্সিকে গ্রেফতার করতে র্যাবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ পত্রে রাজু মুন্সিকে বগুড়ার একটি ডাকাতি মামলার আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বগুড়া ডিবি’র অনুরোধে র্যাব ফরিদপুর রাজু মুন্সিকে গ্রেফতার করলে বগুড়া ডিবি পুলিশের একটি টিম তাকে বগুড়ায় নিয়ে আসে। এরপর আব্দুল হক বাদি হয়ে ১১ অক্টোবর রাতেই রাজু মুন্সির নামে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন ডিবির এসআই ফজলুল হক।
ডিবি পুলিশ রাজু মুন্সিকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিমকার্ড ও ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এছাড়াও প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা রাখা ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়। ডাকাতি মামলার অনুরোধ পত্র পাঠিয়ে গ্রেফতার করা যুবককে প্রতারণা মামলায় চালান দেয়ার অভিযোগে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি তিনজনকে ডিবি থেকে প্রত্যাহার করে আরআরএফ-এ সংযুক্তির আদেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি’র আন্দোলনের পর গত ২১ অক্টোবর রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে বগুড়ায় আসেন। তিনি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করলে প্রত্যাহার হওয়া তিন পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে ওই দুইজনের সংযুক্তি আদেশ বাতিল করা হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ইনচার্জ ইকবাল বাহার জানান, সংযুক্তির আদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় আরআরএফ রাজশাহী থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা দু’জন বগুড়া জেলা পুলিশে যোগদান করেছেন। তিনি বলেন, তাকে স্বপদে বহাল করা হয়েছে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/145406