সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন লড়াই হবে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন লড়াই হবে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে উল্লাপাড়ায় ততই চাপ বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে। আগামী সংসদ নির্বাচনে কে হবেন বিএনপির প্রার্থী এ নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। বিএনপির প্রায় হাফ ডজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় বস্তুত উল্লাপাড়ায় এখন বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। তবে বিএনপির প্রার্থী যেই হোন না কেন লাড়াই হবে জামায়াতের প্রার্থীর সাথে।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সাবেক সংসদদ সদস্য জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম. আকবর আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল ওহাব, সদস্য সচিব আজাদ হোসেন, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান জ্যোতি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এড.সিমকী ইমাম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি কে.এম শরফুদ্দীন মঞ্জু, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদ রনি।

এই আসনে জামায়াত ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এছাড়াও এনসিপি’র সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব অরণ্য দ্রুতি চৌধুরী প্রীতি প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনি এলাকার প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব  আব্দুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপিতে একাধিক বিভাজন রয়েছে। বর্তমানে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পৃথকভাবে তার অনুসারীদের নিয়ে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের প্রচারপত্র, দলের বিভিন্ন কর্মসূচি, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী, শাহাদত বার্ষিকী, শহীদ জেহাদ দিবস, বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশ, নৌকাবাইচ, ফুটবল খেলা উপলক্ষে পৃথকভাবে  আয়োজিত অনুষ্ঠান, উঠান বৈঠক, বিভিন্ন শ্রেণি পেশাজীবী সংগঠনের সাথে মতবিনিময় ও ব্যাপক শো-ডাউন করছেন।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রার্থিতা চেয়ে বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন প্রচারপত্র প্রকাশ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। উল্লাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি কর্মী জহির হোসেন বলেন, দলের একাধিক পক্ষের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে যেভাবে এক পক্ষ অপর পক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর চাঁদাবাজি ও সস্ত্রাসের অভিযোগ করছেন তাতে করে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এহেন পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটারা মনে করেন সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত  প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শতভাগ নিবেদিত হয়ে কাজ না করলে প্রার্থী যতই শক্তিশালী হোন না কেন জয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সাখোয়াৎ হোসেন বলেন, কলেজ জীবনে ছাত্রদল করতাম। বিএনপির নেতা তৈরির কারখানা ছিল ছাত্রদল। কিন্তু ডাকসু, চাকসু, জাকসু ও রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পরাজয়  জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফলবে কিনা? এটা ভেবে ওই নির্বাচনের ফলাফল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বিএনপিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ সকল নির্বাচন ভোটাদের কাছে যেন উদাহরণ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এদিকে জামায়াত নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, উল্লাপাড়ায় জামায়াত অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের নাম ঘোষণার সাথে সাথে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের আমির উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহাজাহান আলী বলেন, জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পর জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা সরকারি অফিস-আদালত, মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাহারা দিয়েছেন।

জামায়াত বিপদের সময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিল ও ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু বিএনপিকে আমরা শত্রু মনে করি না। উল্লাপাড়ার সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী ও নতুন ভোটারা মনে করেন উল্লাপাড়া বিএনপির শত্রু বিএনপি।

জামায়াত বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করতে হলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল বিভাজন ভুলে এক মঞ্চে এসে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তবে আগামী নির্বাচন ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/145200