ঐক্য অটুট রাখুন

ঐক্য অটুট রাখুন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত ও প্রাণ চঞ্চল। অংশগ্রহণ মূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে সব প্রস্তুতি শেষ এখন শুধু জনগণের অংশগ্রহণের অপেক্ষা। ঠিক তখন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতির মাঠ।

স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদকে পাশ কাটিয়ে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির অভিযোগ, সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই বিএনপির অবস্থান, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কোনো কারণে নাও হতে পারে। কিন্তু জুলাই সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সেটি সবার আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জনসম্মুখে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে স্বাক্ষর করার আহবান জানিয়েছে। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা সহ তিন দফা দাবি জানানো হয়।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা মঙ্গলবার সরকারের কাছে পেশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ দুই ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে সংবাদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। জুলাই জাতীয় সনদে উল্লেখিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে ২৭০দিন বা নয় মাস সময় বেধে দেয়া হবে। এর মধ্যে সংসদ ব্যর্থ হলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবে। এই সাংবিধানিক আদেশের আলোকেই গণভোট হবে। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে হতে পারে। তবে গণভোটে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ থাকবে না। জুলাই জাতীয় সনদের সঠিকভাবে বাস্তবায়ন জাতিকে অতীতের বোঝা থেকে মুক্ত করবে এবং নতুন বাংলাদেশের পথ দেখাবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে করা সুপারিশ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাতে এই সুপারিশ মালা তুলে ধরেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কিংবা গণভোট নিয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এর আগে ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, কমিশনের সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

গত ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর এ স্বাক্ষর করেন তারা। জুলাই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি দলের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। রক্তক্ষয়ী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সর্বমহলে রাষ্ট্র সংস্কারের যে জোরালো দাবি উঠেছিল, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত রোড ম্যাপ অনুযায়ী বহুল কাক্সিক্ষত একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নিজের বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব’।

গণতন্ত্রের পথ কেবল স্বাক্ষরের মাধ্যমে শুরু নয়, এটি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদ মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা। এই দলিলের দ্রুত বাস্তবায়ন ঘটবে এবং এটিই বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।

এই সনদকে সফল করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নিজ নিজ অনড় অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে বলে মনে করি আমরা। কারণ দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের চেতনা সমুন্নত রাখতে সব পক্ষ জুলাই সনদের পথ ধরে একটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে দৃঢ়পায়ে এগিয়ে যাবে।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/145025