সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দারফুরের উত্তরাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের দখলের পর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সুদান। রাস্তায় পড়ে আছে শত শত মরদেহ, ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর দখলের পর সহিংসতা ও গণহারে হত্যার কারণে অন্তত ৬০ হাজার বাসিন্দা শহর ছেড়ে পালিয়েছে। খবর বিবিসির।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, শহরটি রবিবার দখলের পর থেকে আরএসএফ অন্তত ১,৫০০ জনকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে অন্তত ৪৬০ জনকে একটি হাসপাতালে হত্যা করা হয়েছে।
আরএসএফ যোদ্ধারা শহরটি দখল করার পর গণহারে হত্যা, ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, রাস্তায় শত শত মরদেহ পড়ে আছে, অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। শহরটি গত ১৮ মাস ধরে আরএসএফ অবরোধ করে রেখেছিল, ফলে খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি ছিল ভয়াবহ।ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র ইউজিন বায়ুন বলেন, “এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের বেশিরভাগ এখন পশ্চিমের তাউইলা শহরে আশ্রয় নিচ্ছে। শরণার্থীরা ভয়াবহ নৃশংসতার কথা জানিয়েছেন, যার মধ্যে ধর্ষণ, পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের ঘটনা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি শিশুই অপুষ্টিতে ভুগছে, আমরা পর্যাপ্ত আশ্রয় ও খাবার দিতে পারছি না। ধারণা করা হচ্ছে, এখনো প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা রয়েছে, যেখানে খাবার, পানি ও ওষুধ প্রায় শেষ।
দারফুর অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে, হাসপাতালগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, সাহায্য পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতা দখল নিয়ে সংঘাত শুরু হয়, যা পরিণত হয় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত, এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট।
এল-ফাশেরের পতনে সুদান কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। পশ্চিম সুদান ও দক্ষিণ কর্ডোফান এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে, আর সেনাবাহিনী দখলে রেখেছে রাজধানী খার্তুমসহ মধ্য ও পূর্বাঞ্চল।
আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন, তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডর খোলার আহ্বান জানিয়েছে, তবে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ না হলে সুদান রুয়ান্ডার মতো ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।